ঢাকা ০১:০৫ অপরাহ্ন, সোমবার, ১৩ মে ২০২৪, ৩০ বৈশাখ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

পচা মাছে মৃত্যুও হতে পারে

  • Reporter Name
  • আপডেট টাইম : ০৯:২৪:২৪ অপরাহ্ন, সোমবার, ২৪ এপ্রিল ২০১৭
  • ৩০০ বার

আমরা মাছে-ভাতে বাঙালি, তাই মাছ ছাড়া কি আমাদের চলে? মাছ থেকে আমরা বহুবিধ উপকারী খাদ্য উপাদান ও ওষুধ পেয়ে থাকি।

এছাড়া ভিটামিন ‘এ’ ও ‘ডি’র চাহিদা পূরণ করে মাছের তেল। ওমেগা-৩ ফ্যাটি এসিডের নিরাপদ উৎসও মাছ। পশুর আমিষ ও চর্বির তুলনায় মাছের আমিষ ও চর্বি প্রায় সবার জন্যই ভালো। তাইতো বাঙালিদের প্রতিদিনের খাদ্য তালিকায় মাছ চাই… চাই।

কিন্তু বর্তমানে আমাদের দেশে কৃষিজমিতে মাত্রাতিরিক্ত কীটনাশক ব্যবহার করা হয়। এই কীটনাশক বৃষ্টির পানি বা সেচের মাধ্যমে বিল, জলাশয়গুলোতে গিয়ে পড়ে এবং মাছের বেঁচে থাকার জন্য হুমকি হয়ে দাঁড়ায়।

এছাড়া গ্রামাঞ্চলে জলাশয়ে ধান পচেও মাছের মরে পচে যাওয়ার ঘটনা ঘটছে।

শুধু তাই নয় এক প্রকার অসাধু ব্যবসায়ীরা বিশেষ করে মাছের চোখ, ফুলকা, কানসা ও বাইরের অংশে বিষাক্ত রং দেয়। মাছ তাজা রাখতে রাসায়নিক, কীটনাশক কিংবা মাত্রাতিরিক্ত অ্যান্টিবায়োটিক ব্যাবহার করা হয়, যা দ্রুত ওই মাছের ভেতরে ঢুকে যায় এবং তাজা দেখায়।

এখন প্রশ্ন হল এসব মাছ কি খাওয়া উচিত বা খেলে কি কি সমস্যা হবে?

স্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞদের মতে, মাছ দ্রুত পচনশীল হওয়ায় প্রাথমিক স্তরের পচন বা আমিষের গুণাগুণ নষ্ট হয়। ফলে মাছের বাহ্যিক অবস্থা পর্যবেক্ষণে সঠিকভাবে বোঝা যায় না। সাধারণত মাছের ৩০-৪০ শতাংশ পচে নষ্ট হলেও প্রায়ই এর চোখ, ফুলকা, মাংসপেশি, গন্ধ, বর্ণ ইত্যাদি দেখে তা বোঝার উপায় থাকে না।

আর শুধু মৎস্য সংরক্ষণে অব্যবস্থাপনার কারণে মানুষ এসব পুষ্টিগুণহীন ও ক্ষতিকর মাছ খেয়ে নানা শারীরিক অসুস্থতার শিকার হয়।

বিশেষজ্ঞদের মতে, এ ধরনের মাছ খেলে আমাদের আর কী কী ক্ষতি হতে পারে তা নিম্নে আলোচনা করা হল;

* পচা মাছে শুধু পুষ্টির ঘাটতিই নয় বরং এর বিরূপ প্রভাব মানবদেহের বিপাকক্রিয়াকে নানাভাবে আক্রান্ত করে। ফলে পর্যায়ক্রমে লিভার-কিডনিতে ক্ষতিকর প্রভাব পড়ে।

* এসব মাছ খেলে সবচেয়ে বেশি ও দ্রুত ক্ষতির শিকার হয় শিশুরা। এটা শিশুদের বৃদ্ধিতে বাধা সৃষ্টি করে, সেই সঙ্গে দেখা দেয় নানা রোগ।

* মাছে মানুষের খাওয়ার অনুপযোগী রং ব্যবহার, রাসায়নিক, কীটনাশক কিংবা মাত্রাতিরিক্ত অ্যান্টিবায়োটিক, স্টেরয়েড থেকে মানবদেহে দীর্ঘ মেয়াদে ক্যান্সার, স্নায়ুর রোগ, কিডনি বিকল, হরমোনজনিত প্রতিক্রিয়া দেখা দিতে পারে।

* এই মাছ খেলে ডায়ারিয়া, আমশা প্রচণ্ড পেটব্যথা ও বমি হতে পারে।

* মাছে বিষাক্ত ও ক্ষতিকর রঙের প্রভাব অনেকক্ষণ রান্না করার পরও নষ্ট হয় না। ফলে এসব রং থেকে মানুষের শরীরে মারাত্মক রোগের উদ্ভব হতে পারে।

* কেমিক্যালযুক্ত মাছ খেলে সাধারণত চর্ম, চোখ, মুখ, খাদ্যনালি ও পরিপাকতন্ত্র শ্বাসনালি জ্বালাপোড়া করে।

* চোখে পানি পড়া, কর্নিয়া অকেজো হওয়া, দৃষ্টিশক্তি পরিবর্তন হওয়া এমনকি অন্ধও হয়ে যেতে পারে।

* দুর্বলতা, মাথাব্যথা, কফ ও কাশি, শ্বাসনালি সংকোচন, শ্বাসনালীর অবনয়ন, শ্বাসতন্ত্রে পানি জমা, শ্বাস-প্রশ্বাসে বাধাগ্রস্ত হওয়ার ফলে শ্বাসকষ্ট হতে পারে।

* বমি বমি ভাব, বমি করা, রক্তবমি হওয়া, বুক ও পেটে ব্যথা ও জ্বালাপোড়া করা, কালো পায়খানা, পেটে গ্যাস হওয়া, পাকস্থলীতে ক্ষত রোগ হওয়া।

* চর্ম রোগ, চর্মেও বিভিন্ন ধরনের ইনফেকশন হতে পারে।

* খিঁচুনি, কেন্দ্রীয় স্নায়ুতন্ত্রে অবনয়ন, অজ্ঞান হতে পারে।

* ধীরে ধীরে এসব রাসায়নিক পদার্থ ব্রেনের ক্ষতি করতে পারে। স্মৃতিশক্তি কমে যায়।

* এ ধরণের মাছ পাকস্থলী, ফুসফুস ও শ্বাসনালিতে ক্যান্সার হতে পারে। অস্থিমজ্জা আক্রান্ত হওয়ার ফলে রক্তশূন্যতাসহ অন্যান্য রক্তের রোগ, এমনকি ব্লাড ক্যানসারও হতে পারে। এতে আক্রান্ত হয়ে আপনার মৃত্যু পর্যন্ত হতে পারে।

Tag :

Write Your Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Save Your Email and Others Information

About Author Information

Haor Barta24

পচা মাছে মৃত্যুও হতে পারে

আপডেট টাইম : ০৯:২৪:২৪ অপরাহ্ন, সোমবার, ২৪ এপ্রিল ২০১৭

আমরা মাছে-ভাতে বাঙালি, তাই মাছ ছাড়া কি আমাদের চলে? মাছ থেকে আমরা বহুবিধ উপকারী খাদ্য উপাদান ও ওষুধ পেয়ে থাকি।

এছাড়া ভিটামিন ‘এ’ ও ‘ডি’র চাহিদা পূরণ করে মাছের তেল। ওমেগা-৩ ফ্যাটি এসিডের নিরাপদ উৎসও মাছ। পশুর আমিষ ও চর্বির তুলনায় মাছের আমিষ ও চর্বি প্রায় সবার জন্যই ভালো। তাইতো বাঙালিদের প্রতিদিনের খাদ্য তালিকায় মাছ চাই… চাই।

কিন্তু বর্তমানে আমাদের দেশে কৃষিজমিতে মাত্রাতিরিক্ত কীটনাশক ব্যবহার করা হয়। এই কীটনাশক বৃষ্টির পানি বা সেচের মাধ্যমে বিল, জলাশয়গুলোতে গিয়ে পড়ে এবং মাছের বেঁচে থাকার জন্য হুমকি হয়ে দাঁড়ায়।

এছাড়া গ্রামাঞ্চলে জলাশয়ে ধান পচেও মাছের মরে পচে যাওয়ার ঘটনা ঘটছে।

শুধু তাই নয় এক প্রকার অসাধু ব্যবসায়ীরা বিশেষ করে মাছের চোখ, ফুলকা, কানসা ও বাইরের অংশে বিষাক্ত রং দেয়। মাছ তাজা রাখতে রাসায়নিক, কীটনাশক কিংবা মাত্রাতিরিক্ত অ্যান্টিবায়োটিক ব্যাবহার করা হয়, যা দ্রুত ওই মাছের ভেতরে ঢুকে যায় এবং তাজা দেখায়।

এখন প্রশ্ন হল এসব মাছ কি খাওয়া উচিত বা খেলে কি কি সমস্যা হবে?

স্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞদের মতে, মাছ দ্রুত পচনশীল হওয়ায় প্রাথমিক স্তরের পচন বা আমিষের গুণাগুণ নষ্ট হয়। ফলে মাছের বাহ্যিক অবস্থা পর্যবেক্ষণে সঠিকভাবে বোঝা যায় না। সাধারণত মাছের ৩০-৪০ শতাংশ পচে নষ্ট হলেও প্রায়ই এর চোখ, ফুলকা, মাংসপেশি, গন্ধ, বর্ণ ইত্যাদি দেখে তা বোঝার উপায় থাকে না।

আর শুধু মৎস্য সংরক্ষণে অব্যবস্থাপনার কারণে মানুষ এসব পুষ্টিগুণহীন ও ক্ষতিকর মাছ খেয়ে নানা শারীরিক অসুস্থতার শিকার হয়।

বিশেষজ্ঞদের মতে, এ ধরনের মাছ খেলে আমাদের আর কী কী ক্ষতি হতে পারে তা নিম্নে আলোচনা করা হল;

* পচা মাছে শুধু পুষ্টির ঘাটতিই নয় বরং এর বিরূপ প্রভাব মানবদেহের বিপাকক্রিয়াকে নানাভাবে আক্রান্ত করে। ফলে পর্যায়ক্রমে লিভার-কিডনিতে ক্ষতিকর প্রভাব পড়ে।

* এসব মাছ খেলে সবচেয়ে বেশি ও দ্রুত ক্ষতির শিকার হয় শিশুরা। এটা শিশুদের বৃদ্ধিতে বাধা সৃষ্টি করে, সেই সঙ্গে দেখা দেয় নানা রোগ।

* মাছে মানুষের খাওয়ার অনুপযোগী রং ব্যবহার, রাসায়নিক, কীটনাশক কিংবা মাত্রাতিরিক্ত অ্যান্টিবায়োটিক, স্টেরয়েড থেকে মানবদেহে দীর্ঘ মেয়াদে ক্যান্সার, স্নায়ুর রোগ, কিডনি বিকল, হরমোনজনিত প্রতিক্রিয়া দেখা দিতে পারে।

* এই মাছ খেলে ডায়ারিয়া, আমশা প্রচণ্ড পেটব্যথা ও বমি হতে পারে।

* মাছে বিষাক্ত ও ক্ষতিকর রঙের প্রভাব অনেকক্ষণ রান্না করার পরও নষ্ট হয় না। ফলে এসব রং থেকে মানুষের শরীরে মারাত্মক রোগের উদ্ভব হতে পারে।

* কেমিক্যালযুক্ত মাছ খেলে সাধারণত চর্ম, চোখ, মুখ, খাদ্যনালি ও পরিপাকতন্ত্র শ্বাসনালি জ্বালাপোড়া করে।

* চোখে পানি পড়া, কর্নিয়া অকেজো হওয়া, দৃষ্টিশক্তি পরিবর্তন হওয়া এমনকি অন্ধও হয়ে যেতে পারে।

* দুর্বলতা, মাথাব্যথা, কফ ও কাশি, শ্বাসনালি সংকোচন, শ্বাসনালীর অবনয়ন, শ্বাসতন্ত্রে পানি জমা, শ্বাস-প্রশ্বাসে বাধাগ্রস্ত হওয়ার ফলে শ্বাসকষ্ট হতে পারে।

* বমি বমি ভাব, বমি করা, রক্তবমি হওয়া, বুক ও পেটে ব্যথা ও জ্বালাপোড়া করা, কালো পায়খানা, পেটে গ্যাস হওয়া, পাকস্থলীতে ক্ষত রোগ হওয়া।

* চর্ম রোগ, চর্মেও বিভিন্ন ধরনের ইনফেকশন হতে পারে।

* খিঁচুনি, কেন্দ্রীয় স্নায়ুতন্ত্রে অবনয়ন, অজ্ঞান হতে পারে।

* ধীরে ধীরে এসব রাসায়নিক পদার্থ ব্রেনের ক্ষতি করতে পারে। স্মৃতিশক্তি কমে যায়।

* এ ধরণের মাছ পাকস্থলী, ফুসফুস ও শ্বাসনালিতে ক্যান্সার হতে পারে। অস্থিমজ্জা আক্রান্ত হওয়ার ফলে রক্তশূন্যতাসহ অন্যান্য রক্তের রোগ, এমনকি ব্লাড ক্যানসারও হতে পারে। এতে আক্রান্ত হয়ে আপনার মৃত্যু পর্যন্ত হতে পারে।